ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে সৃষ্ট টানাপড়েন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে বহুমুখি সংকটে ফেলে দিয়েছে। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় রিভিউ কিংবা রায়ের পর্যবেক্ষণে ব্যবহৃত কয়েকটি শব্দ এক্সপাঞ্জ করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রীরা যখন দৌড়াচ্ছেন প্রধান বিচারপতির বাসভবন ও বঙ্গভবনে, ঠিক এসময়ে সরকারের সামনে এসে দেখা দিয়েছে আরেক নতুন সংকট। আর সেটা হলো ১৫৪ জন বিনা ভোটের এমপির বৈধতার প্রশ্ন।
আদালত যদি কোনো কারণে বিনাভোটে নির্বাচিত ১৫৪ জন সংসদ সদস্যকে অবৈধ ঘোষণা করে তাহলে সরকারকে বাধ্য হয়ে সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী সংসদ এমনিতেই ভেঙ্গে যাবে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৫৪ জন সংসদ সদস্য। ওই সময় তাদের পদে থাকার বৈধতা প্রশ্নে হাইকোর্টে একটি রিট করেছিলেন বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা। বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি খুরশিদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রিট খারিজ করে দিয়েছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খারিজ হওয়া ওই রিটের রিভিউয়ের বিষয়েও প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা। বিএনপি-জামায়াতের পক্ষ থেকেই আইনজীবীদেরকে রিভিউয়ের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
বিএনপি-জামায়াত মনে করছে, সংসদে বিনাভোটের ১৫৪ জন এমপি থাকার কারণেই প্রধান বিচারপতি ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের পর্যবেক্ষণে বর্তমান সংসদকে অপরিপক্ক বা অকার্যকর বলে মন্তব্য করেছেন। তাই, এ মুহূর্তে এই ১৫৪ জন বৈধতা প্রশ্নে করা খারিজ হওয়া রিটের রিভিউ করলে তা আদালত গ্রহণ করতে পারে। এমনকি শুনানিতে আদালত যুক্তিসংগত মনে করলে এই ১৫৪ জন এমপিকে অবৈধ ঘোষণাও করে দিতে পারে। এ ধরণের সম্ভাবনা থেকেই বিএনপি-জামায়াত রিভিউয়ের বিষয়ে ইতিবাচক চিন্তা করছে বলে জানা গেছে।
সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন এ ব্যাপারে গণমাধ্যমকে বলেছেন, এখন ওই রিটের রিভিউ আবেদন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিলম্বের যুক্তিসঙ্গত কারণ ও ব্যাখ্যা দিতে হবে। হাইকোর্ট তা গ্রহণযোগ্য মনে করলে সে বিষয়েও শুনানি হতে কোনো আইনগত বাধা থাকবে না।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেছেন, ১৫৪ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যের রিটের ব্যাপারে রিভিউয়ের সুযোগ আছে।
এ বিষয়ে আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেছেন, কোনো মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন না করলে পরে যে কেউ বিলম্বের যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখিয়ে জনস্বার্থে রিভিউ আবেদন করতে পারেন।
আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, বিভিন্ন অসমর্থিত সূত্রে আমরাও এমনটি শুনেছি বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা কিছু প্রস্তুতি নিচ্ছে, তবে এ বিষয়ে কোনো সঠিক তথ্য আমাদের কাছে নেই। তিনি বলেন, তবে সময় এবং মামলার গুণাগুণ বিবেচনা করে আমরা যেটা বুঝি, ইতিবাচক কোনো ফল পাওয়ার সম্ভাবনা বিএনপির একেবারেই নেই।
জানা গেছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপি-জামায়াতের রিভিউয়ের প্রস্তুতির কথা শুনে সরকারের ভেতরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়ে গেছে। সরকার মনে করছে, প্রধান বিচারপতি এমনিতেই সংসদকে অকার্যকর বলে আখ্যা দিয়েছেন। এখন শুধু অবৈধ ঘোষণা করার বাকী। ১৫৪ জনের ইস্যুটাকে বিচার বিভাগ কাজে লাগাতে পারে বলেও মনে করছে সরকার। এ নিয়ে এখন চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছে সরকার।