প্রযুক্তির অনেক সুবিধা রয়েছে। তবে মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে অনেক বিপদও ডেকে নিয়ে আসে। আর সেই কুফল সম্পর্কে যখন আমরা উপলব্ধিই করি না, তখনই তো মারাত্মক বিপদ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। যেমনটা হয়েছে মোবাইলের ক্ষেত্রে।
৭০-এর দশকে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এনে দিয়েছিল মোবাইল ফোনের আবিষ্কার। তারপর সময় যত এগিয়েছে তত মোবাইলের রূপ বদলেছে, বদলেছে তার কাজ করার ধরনও।
আর এখন তো মোবাইল মানে শুধু কথা বলার প্রযুক্তি নয়, আমাদের সারা দুনিয়া বলা যেতে পারে। এ কথার মধ্যে কোনো ভুল নেই যে, আজকের দিনে টিকে থাকতে গেলে মোবাইলের দরকার আবশ্যক। কিন্তু বিপদটা কোথায় জানেন কি?
যেভাবে আমরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করছি, তাতে আমাদের চোখের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ফলে কমছে দৃষ্টিশক্তি। শুধু তাই নয়, কিছু ক্ষেত্রে তো দৃষ্টিশক্তি একেবারে কমে গিয়ে অন্ধত্বের মতে সমস্যাও দেখা দিচ্ছে।
গত এক দশকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে মোবাইলের কারণে চোখের ক্ষতি যে শুধুমাত্র প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যেই আটকে থাকছে, তা নয়। ছোটরাও বাদ পড়ছে না এমন ক্ষতির হাত থেকে। কিন্তু প্রশ্নটা হল, কীভাবে মোবাইল আমাদের চোখকে নষ্ট করে দিচ্ছে?
নীল আলোই মূল কারণ
মোবাইলের পর্দা থেকে যে নীল আলো বরিয়ে আসে, তা আমাদের চোখের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ১০ থেকে ১৫ মিনিট টানা এই আলো সরাসরি চোখের উপর পড়লে চোখের অন্দরে থাকা পানির স্তর শুকিয়ে যেতে শুরু করে।
সেই সঙ্গে চাপ বাড়তে থাকে রেটিনার ওপরও। ফলে ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে শুরু করে।
শরীরেরও মারাত্মক ক্ষতি হয়
এই নীল আলোর প্রভাবে শরীরের অন্দরে মেলাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ মারাত্মক কমে যায়। ফলে ঘুম কমতে শুরু করে। আর এ কথা তো কারও আজানা নেই যে ঘুম ঠিক মতে না হলে হার্ট এবং মস্তিষ্কের ওপর মারাত্মক চাপ পড়ে।
সেই সঙ্গে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায়। এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন যে মোবাইল একদিকে যেমন আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে দিচ্ছে, তেমনি ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখেও ঠেলে দিচ্ছে।
বাঁচার উপায়
এখন যা পরিস্থিতি তাতে মোবাইল ছাড়া দিন পার করা সম্ভব নয়। তাই কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। সেক্ষেত্রে ভুলেও অন্ধকারে মোবাইল ব্যবহার করবেন না। এমনটা করলে চোখের মারাত্মক ক্ষতি হয়।
শুধু তাই নয়, ঘুমাতে যাওয়ার আগেও মোবাইল ব্যবহার চলবে না। সেই সঙ্গে সেটিং-এ গিয়ে মোবাইল স্কিনের ব্রাইটনেস কিছুটা কমিয়ে দেবেন, তাতে নীল আলোর প্রভাব কম পড়বে।
প্রসঙ্গত, কিছু কিছু মোবাইল ফোনে দেখবেন ‘লাইট রিডাকশ’ বলে একটা অপশন আছে, সেটা অন করে দিলেই দেখবেন স্ক্রিনের ব্রাইটনেস কমে যাবে। এক্ষেত্রে আরেকটি জিনিস মাথায় রাখতে হবে, তা হল যতটা সম্ভব মোবাইল ফোনের ব্যবহার কম করার চেষ্টা করবেন। এমনটা করলেও ক্ষতির আশঙ্কা কমবে।
চোখকে আরাম দিন
টানা মোবাইল ব্যবহার করবেন না। বরং কিছু সময় পর পর কয়েক মিনিট চোখটা মোবাইলের স্ক্রিনের থেকে সরিয়ে নেবেন। এমনটা করলে ড্রাই আইয়ের খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা কমবে।
এক্ষেত্রে একটা সহজ নিয়ম মেনে চলতে পারেন। ২০ মিনিট মোবাইল ঘাঁটলে ২০ সেকেন্ড চোখকে আরাম দিন। এই রেশিওটা মেনে চললে দেখবেন উপকার মিলবে।