রির্পোটঃঅনলাইন ডেস্ক.
শৈশবেই নিজের জরায়ুর টিস্যু ফ্রিজে জমিয়ে রেখেছিলেন মোয়াজা আল মাতরুশি। ১৩ বছর পর সেই টিস্যু ব্যবহার করেই পুত্র সন্তানের জন্ম দিলেন তিনি। মোয়াজাই ‘বিশ্বের প্রথম’ নারী যিনি এই পদ্ধতিতে সন্তানের জন্ম দিলেন।মোয়াজা জানালেন, বিষয়টি সত্যিই ‘অলৌকিক’।২৪ বছর বয়সে ফ্রিজে রাখা জরায়ুর সাহায্যেই মা হন মোয়াজা। বয়ঃসন্ধির আগেই জরায়ুর টিস্যু সংরক্ষণ করা হয়েছিল। ১৩ বছর পর সেই টিস্যু ব্যবহার করেই পুত্র রশিদের জন্ম দেন দুবাইয়ের বাসিন্দা মোয়াজা।
অন্যদের মতো আট দশটা নারীর মতো সন্তানের জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না মোয়াজার। ক্যান্সার ও অন্যান্য রোগের চিকিৎসার জন্য তার সন্তান জন্ম দেওয়ার ভ্রুণ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।টেলিগ্রাফে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, দুবাইয়ে থাকতে ৯ বছর বয়সে মোয়াজা বিটা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হন। এই রোগের ফলে তার শরীরের রক্তে অক্সিজেন বহন করার ক্ষমতা কমে আসে।পরে চিকিৎসার জন্য মোয়াজার বাবা-মা তাকে লন্ডনের গ্রেট ওরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতালে নিয়ে আসেন। ভাইয়ের বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করা হয় তার শরীরে।
চিকিৎসার জন্য কেমোথেরাপি প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তাতে মোয়াজার ৯৯ শতাংশ বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি ছিল। মোয়াজার মা জরায়ু ফ্রিজ করার পদ্ধতির কথা জানতেন।মোয়াজা বলেন, ‘নিজের সর্বস্ব দিয়ে শুধু আমাকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন মা।’লন্ডন থেকে সুস্থ হয়ে দুবাই ফিরে আসেন মোয়াজা। ২০ বছর বয়সে বিয়ের পর থেকেই মা হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু অনিয়মিত পিরিয়ড ও হট ফ্লাশের মতো পেরি-মেনোপজাল সমস্যা দেখা দিচ্ছিল।
২০১৪ সালে লন্ডনে এসে হরমোন থেরাপি করানোর পরও হতাশ হয়েই ফিরে যেতে হয়। কিন্তু হাল ছাড়েননি মোয়াজার স্বামী আহমেদ। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে ফ্রিজ করা জরায়ুর টিস্যু ফের মোয়াজার শরীরে প্রতিস্থাপন নিয়ে গবেষণা শুরু করেন ডেনমার্কের একদল চিকিৎসক।ধীরে ধীরে মোয়াজার জরায়ুর অংশ তার শরীরে প্রতিস্থাপন শুরু হয়। তিন মাস পর শুরু হয় আইভিএফ পদ্ধতি। ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে গর্ভধারণ করেন মোয়াজা।
বুধবার মোয়াজা লন্ডনের পোর্টল্যান্ড হাসপাতালে পুত্র সন্তান জন্ম দেওয়ার পর বলেন, ‘এটি সত্যিই অলৌকিক। একটি সুস্থ বাচ্চা জন্ম দেওয়ার জন্য আমাকে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে।’‘আমি সব সময়ই বিশ্বাস করতাম, আমিও মা হতে পারব, আমারও বাচ্চা হবে।’ বললেন মোয়াজা।মোয়াজার চিকিৎসক গাইনোকোলজি অ্যান্ড ফর্টিলিটি বিষয়ক পরামর্শক সারা মেথিউস বিবিসিকে বলেছেন, ‘এর আগে ফ্রজেন ওভারি থেকে অন্তত ১০০ জন নারী সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। কিন্তু বয়ঃসন্ধির আগে ফ্রিজ করা ওভারিয়ান টিস্যু থেকে শিশুর জন্ম এই প্রথম।’