মোঃ ফেরদাউছ সিকদার।।
আটঘর থেকে ফিরেঃ বর্ষা মৌসুমে শুরুর আগেই বরিশাল বিভাগের অনেকজেলাসহ উপকূলীয় খাল-বিল-নালায় পানির প্রবাহ বেড়েছে। সেই সঙ্গে নানা প্রজাতির দেশি জাতের মাছের পোনার বিচরণ বাড়ছে।
চিংড়ি ও দেশি মিঠাপানির মাছের ছোট পোনা ধরার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বাঁশের তৈরি বিশেষ ফাঁদ। মাছ ধরার এ ফাঁদের পরিচিতি চাঁই নামে। গ্রামাঞ্চলে মাছ ধরার সবচেয়ে আদি উপকরণের মধ্যে একটি হচ্ছে বাঁশের তৈরি চাই।
গ্রীষ্মের শুরু থেকে গ্রামাঞ্চলের খাল-বিল ও নদী-নালায় চাঁই দিয়ে মাছ ধরার ধুম পড়ে যায়। যা চলতে থাকে ভাদ্র-আশ্বিন মাস পর্যন্ত। বরিশাল বিভাগের বেশ কয়েকটি জেলার বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ঝালকাঠীসহ উপকূলের অন্যান্য উপজেলার হাটবাজারগুলোতে মাছ ধরার এই উপকরণটির বাজারজাত ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। এসব এলাকার বাজারে প্রতি হাটেই হাজার হাজার চাঁই বিক্রি হয়। কিন্তু আটঘর করিয়ানা বাংলাদেশের মধ্যে একটি ঐতিহ্যবাহী ভাসমান হাট। ঐহাটে রয়েছে ভাসমান পেয়ারার হাট, নৌকার হাট। পাশা পাশি রাস্তার দুই পাশে আরো রয়েছেন বাঁশের চাঁইয়ের হাট।
পিরোজপুর জেলার স্বরুপকাঠী উপজেলার আটঘর কুরিয়ানার চাইয়ের মোকামে সপ্তাহের শুক্র ও সোমবার দুই দিন বসছে চাঁইয়ের বড় বাজার। মাছ ধরার এই ফাঁদ নিয়ে বিক্রেতারা ভাসমান নৌকার হাটের পাশেই বসেন । সেখানে ভিমরুল পেয়ারার হাট এবং নৌকার হাট বসার কারনে পরিচিতি সাপেক্ষে ঐখানে গড়ে উঠছে চাঁই বেচাকেনার বিরাট বাজার।
জানা গেছে, পিরোজপুরের স্বরুপকাঠী উপজেলার আটঘর করিয়ানায় চাঁইয়ের সবচেয়ে বড় মোকাম। এখান থেকে পাইকারি দরে চাঁই কিনে নিয়ে ব্যবসায়ীরা উপকূলের বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করে থাকেন।
আটঘর করিয়ানার চাঁই ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদ স্বরুপকাঠীর প্রত্যন্ত গ্রামে গড়ে উঠেছে চাঁই তৈরির শিল্প। এ ছাড়াও বরিশাল জেলার বিভিন্ন এলাকায়ও বাণিজ্যিকভাবে চাঁই তৈরি হয়ে থাকে। এসব চাঁই আটঘর করিয়ানার বড় মোকামে সরবরাহ হয়ে তা উপকূলের হাটবাজারে বাজারজাত হয়। আকারভেদে ৫০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় একেকটি চাঁই।
বিক্রেতা আফজাল বলেন, প্রতিহাটে আমি ৪০ থেকে ৮০টি চাঁই বিক্রি করে থাকেন। তিনি বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার বিক্রি অনেক বেশি। তার মতো আরো ১০-১৫ জন বিক্রেতা রয়েছেন এ হাটে।
চাঁই ক্রেতা নুরুল জানান, এবার বৃষ্টিপাতে নদীর পানি বেড়েছে। সামনে ভাদ্র মাস পুরো মাসেই বৃস্টি হবে পানিতে খাল, নালা, নদী পানিতে মাঠ-ঘাট ভরে যাওয়ায় দেশি প্রজাতির পুঁটি, কই মাছসহ চিংড়ির আনাগোনা শুরু হয়েছে। এ মাছ ধরার সবচেয়ে সহজ কার্যকর উপকরণ হচ্ছে বাশের চাঁই।