বগুড়ায় সদ্য মাধ্যমিক পাস করা ছাত্রীকে ধর্ষণ এবং নির্যাতিতা ও তার মায়ের মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার ঘটনায় শহর শ্রমিক লীগের সভাপতি (বহিষ্কৃত) তুফান সরকার ও তার স্ত্রীর বড় বোন পৌরসভার সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকিকে ফের দুইদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
আসামিদের অধিকতর জিজ্ঞাবাদের জন্য তৃতীয় দফায় আদালতে রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (অপারেশন) আবুল কালাম আজাদ।
এদিকে দ্বিতীয় দফায় দুইদিনের রিমান্ড শেষে তুফান সরকারের অন্যতম সহযোগী মুন্না আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। শুক্রবার বিকেলে জেলার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক শ্যাম সুন্দর রায় এই জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
আদালত সূত্র জানায়, মুন্না তার স্বীকারোক্তিতে তুফানের সঙ্গে ওই ছাত্রীর সম্পর্ক, তুফানের বাড়িতে মেয়েটিকে ধর্ষণ, তুফানের স্ত্রী আশা খাতুন, কাউন্সিলর রুমকি ও তার মা রুমি বেগম কিভাবে মা-মেয়ের চুল কেটেছে এবং কিভাবে তাদেরকে মিথ্যা চুরির অপবাদ দেয়া হয়েছে- সে বিষয়ে বলেছে। মুন্না মা-মেয়েকে মারপিট করা ও নাপিত জীবনকে ডেকে আনার কথাও স্বীকার করেছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দ্বিতীয় দফা একদিনের রিমান্ড শেষে তুফানের স্ত্রী আশা খাতুন ও শাশুড়ি রুমি বেগমককে আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাদেরকে জেলহাজতে পাঠান। বগুড়ার অতিরিক্ত সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পাঁচদিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। কিন্তু বিচারক শ্যাম সুন্দর রায় রিমান্ড নামঞ্জুর করে আগামী সাতদিনের মধ্যে তাদের জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (অপারেশন) আবুল কালাম আজাদ বলেন, আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক আসামিদের জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
বগুড়ার পুলিশ সুপার (এসপি) আসাদুজ্জামান বলেন, তুফানের বিষয়ে আলোচনায় এখন আর নতুন কিছু নেই। সবকিছু শনাক্ত হয়ে সব আসামি গ্রেফতার হয়েছে। এখন চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।
তিনি জানান, তুফানের বড় ভাই শহর যুবলীগের বহিষ্কৃত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন সরকারের বিরুদ্ধে অন্য একটি মামলায় জারি থাকা গ্রেফতারি পরোয়ানা বৃহস্পতিবার আদালত থেকে সংগ্রহ করেছে পুলিশ। এখন তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুলাই ভালো কলেজে ভর্তির কথা বলে সদ্য মাধ্যমিক পাস করা এক শিক্ষার্থীকে বাসায় এনে ধর্ষণ করেন বগুড়া শহর শ্রমিকলীগের আহ্বায়ক (বর্তমানে বহিষ্কৃত) তুফান সরকার। এরপর শুক্রবার (২৮ জুলাই) বিকেলে তুফানের স্ত্রী আশা খাতুন, তার বড় বোন বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকি ও তার মা রুমি বেগমসহ তাদের সহযোগিরা কাউন্সিলরের চকসুত্রাপুর এলাকার বাসায় সদ্য সালিশের নামে মা-মেয়ের ওপর অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটায়।