লেখক:দ্বীপ
সানজানা জেরিন।
চট্টগ্রাম মেডিকেলের ছাত্রী! ৩৩ তম বিসিএসে নিয়োগ
পেয়ে ফেনীতে যাচ্ছিল জয়েন করতে।
পথে ছিনিতাই কারী এটাক করে ফিল্মি স্টাইলে ফেলে
দেয় রাস্তায়!! মনে আছে মেয়েটার কথা??? ওর
স্বামী,মুনতাহিদ ভুঁইয়া, হানিমুনের টাকা দিয়ে চিকিৎসা
শুরু করেছিল। এখন জীবন্মৃত হয়ে পড়ে আছে মেয়েটা।
বেশ কয়েক মাস আগে পেপারে দেখেছিলাম মেয়েটা এখন
কাঁদতে পারে। স্বামী বা শ্বাশুড়ি একটু আড়াল হলেই
কাঁদে।বাচ্চাদের মত করে কেঁদে ওঠে। মেয়েটা তার মানে
কিছু একটা বুঝতে পারছে নিশ্চয়ই?
এই মেয়েটার স্বামী টা মানে এই মুন্তাহিদ ছেলেটা খুব
বোকা তাই না?? না হলে যে মেয়ে এই আছে এই নাই,যার
সাথে মাত্র একটা বছর কাটিয়েছে তার জন্য নিজের
বর্তমান,ভবিষ্যত সব উজাড় করে দিচ্ছে!!
ছেলেটা সংবাদগ্রাহক কে বলেছিল রাতে জেরিনের
রুমের ফ্লোরে বিছানা করে থাকে কারণ একটু পর পর
মেয়েটার বুকে কফ জমে সেটা পরিষ্কার করার জন্য। কি
বোকা একটা ছেলে!!
এই মেয়েটার জন্য খুব একটা ভাবি না,কিন্তু ছেলেটার কথা
ভাবলেই শ্রদ্ধায় মন টা ভরে ওঠে। আজকে ফেসবুকের
একটা পেইজে ওদের বিয়ের,বিয়ের আগের,পরের,প্রথম
বিবাহ বার্ষিকীর ছবি দেখলাম।
আর দেখলাম মেয়েটার এখনকার ছবি। লাল বেনারসি পড়া
সুন্দর মিষ্টি মেয়েটার মাথায় এখন চুল নেই। সৌন্দর্য বলতে
যা বোঝায় তার ছীটেফোঁটাও অবশিষ্ট নেই। ভালবাসি
বলা তো দূরে র কথা ভালবাসা বোঝার ক্ষমতা টাও নেই
হয়ত।
তবু এই মুন্তাহিদ ছেলেটা রোজ মেয়েটাকে গোসল করিয়ে
দেয়,খাইয়ে দেয়,ও হ্যা, মেয়েটাকে খাওয়াতে হয় পাইপের
মাধ্যমে স্যুপ বা জুস। দাঁত দিয়ে চিবিয়ে তো দঊরের
কথা,নিজে গিলে খাওয়ার শক্তি নেই মেয়েটার।
ওদের এবার পহেলা বৈশাখের ছবিতে দেখলাম
মেয়েটাকে লাল সাদা কামিজ পরিয়ে মাথা আঁচড়ে বেশ
পরিপাটি করে হুইল চেয়ারে বসিয়ে মাথাটা সোজা করে
ধরে রেখেছে মুন্তাহিদ। কারণ নিজে মাথা সোজা করে
বসার শক্তি মেয়েটার নেই।
।এই মেয়েটা আসলেই ভাগ্যবান। খুব কম মেয়ে এতটা
ভাগ্যবান হয়।
সবকিছুর একটা ভাল দিক আছে। একজন জেরিন প্রমান করে
দিল ভালবাসা বলতে যা বোঝায় তা এখনো এই পৃথিবী
থেকে হারিয়ে যায় নি। একজন মুন্তাহিদ দেখিয়ে দিল
কিভাবে ভাল বাসতে হয়।
যেখানে ভালবাসা জিনিস টা আলুপটলের সমানে চলে
আসছে,যেখানে ভালবাসা শরীর আর ক্যারিয়ার নামক শব্দ
দুটোই আটকে আছে সেখানে মুন্তাহিদ দেখিয়ে দিল শরীর
কিছু নয়।
একটা নিষ্প্রাণ, মৃত প্রায় শরীর কেও ভালবাসা যায়। যে
মেয়েটা মাথা সোজা করে বসতে পারে না,সে মেয়েটার
মাথা টা তুলে কপালে চুমু দেয়া যায়।
নিষ্প্রাণ হাত দুটোতেও দু গাছি চূড়ি পরানো যায়, শুধু মাত্র
মেয়েটার বুকের মধ্যে ধুকপুক করা যন্ত্রটাকে চালু রাখার
জন্যে বর্তমান,ভবিষ্যত উচ্ছন্নে দেয়া যায়।
আমি নিশ্চিত, যে ছেলেগুলো হ্যাচকা টানে জেরিন কে
ফেলে দিয়েছিল ওরাও হয়ত গোপনে জেরিনের খবর
নেয়,মুন্তাহিদ কে দেখে নিজের স্ত্রী বা প্রেমিকাকে
কপালে চুমু দিয়ে দীর্ঘিশ্বাস ছাড়ে।ওরাও আজকাল
ভালবাসে।
মেয়েরা যারা পুরুষ জাতি টাকে গালি দেয় তারা বোধহয়
এই মুন্তাহিদ টাকে জানেনা। একজন মুন্তাহিদের জন্যেও
পুরুষ জাতি টাকে ভালবাসা যায়,সম্মান করা যায়।
মুন্তাহিদ রা আছে বলেই আমরা আজো ভালবাসি।
ভালবাসতে পারি।
মুন্তাহিদ রা ভালবাসতে শেখায়,ভালবাসার শক্তি দেয়।
মুন্তাহিদ রা ভাল থাকুক। প্রার্থনা করি জেরিন যদি
এভাবে মরেও যায় তবু যেন একটা বার বলে যেতে পারে যে
“মুন্তাহিদ আই লাভ ইউ”
এই একটা কথা শোনার অপেক্ষাতেই যে ছেলেটা
দিনাতিপাত করছে।
.
শেয়ার করে দিন এই সত্যিকারের ভালোবাসা.. এটা পড়ে যদি কারো মনের পশুত্ব এতটুকু কমে আর একটু সত্যিকারের ভালোবাসা জন্ম নেয় প্রিয় মানুষগুলোর জন্য। আর লাখো শেয়ারের লাখো লাখো মানুষের দোয়াগুলো যেন কবুল হয়ে যায় জেরিন <3 মুন্তাহিদের জন্য।
লেখক:দ্বীপ