বিদায়ী অর্থবছরের (২০১৬-১৭) দ্বিতীয়ার্ধের তুলনায় বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে চলতি অর্থবছরের (২০১৭-১৮) প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। স্থিতিশীল ও কর্মসংস্থানমুখী প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গভর্নর ফজলে কবির।
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে নতুন মুদ্রানীতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর বলেন, স্থিতিশীলতা ও কর্মসংস্থানমুখী প্রবৃদ্ধি অর্জনের বিষয়ে নতুন মুদ্রানীতিতে নজর দেয়া হয়েছে। আগের বছর বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এবার ধরা হয়েছে ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। তবে এ (১৬ দশমিক ৩ শতাংশ) ঋণ প্রবৃদ্ধি আগের বছরের তুলনায় কম নয়।
তিনি বলেন, গত বছর যে ভিত্তি ধরে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল এবার সেই ভিত্তি ধরলে ঋণ প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ১৮-১৯ শতাংশ।
গভর্নর বলেন, আমাদের মূল কাজ প্রবৃদ্ধিকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা। এজন্য ব্যালান্সে নিয়ে এসেছি। গ্রোথ (প্রবৃদ্ধি) অ্যান্ড স্টাবিলিটি (স্থিতিশীলতা) ফোকাস সব সময় আছে। এ গ্রোথটা কর্মসংস্থানভিত্তিক করতে চাচ্ছি।
ফজলে কবির বলেন, সরকারের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) যে লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৪ শতাংশ তাতে পূর্ণ সহায়তা এবং মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার দিকে নজর দিয়ে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে।
পর্যালোচনা করে দেখেছি, জিডিপির কাঙ্ক্ষিত যে লক্ষ্যমাত্র ৭ দশমিক ৪ শতাংশ, তা অর্জনে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ যথেষ্ট হবে।
নতুন মুদ্রানীতির সফল বাস্তবায়নে দুটি বিষয়কে ঝুঁকি হিসেবে দেখা হচ্ছে উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের সঞ্চয়পত্রগুলোর বাজার সুদহারের সঙ্গে সঙ্গতিহীন উচ্চ মুনাফা হার সরকারের জন্য অতিরিক্ত সুদ ব্যয়ভার সৃষ্টি ছাড়াও মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পের অর্থায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বন্ড বাজারের বিকাশ বাধাগ্রস্ত করছে। ফলে মুদ্রানীতির কার্যকারিতার জন্য দরকারি সুষ্ঠু ট্রান্সমিশন চ্যানেলের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অচিরেই সঞ্চয়পত্রগুলোর মুনাফা হার বিদ্যমান বাজার সুদহারের সঙ্গে সম্পর্কিত করা আবশ্যক।
রেমিট্যান্সের বিষয়ে তিনি বলেন, এএমএল/সিএফটি বিধি-ব্যবস্থা পরিচালনে বিচ্যুতির জন্য বড় বড় আন্তর্জাতিক ব্যাংক উন্নত বিশ্বে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের দ্বারা বিপুল অঙ্কের অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এসব ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলোর অধিকাংশ রেমিট্যান্স প্রেরণকারীে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক গুটিয়ে নেয়। ফলে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রেরণ দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান ও এস কে সুর চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের চেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট উপদেষ্টা আল্লাহ মালিক কাজেমি, প্রধান অর্থনীতিবিদ ফয়সাল আহমেদ, প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মো. আখতারুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।