বিদায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে রেকর্ড পরিমাণ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ কোটি টাকার বেশি আয় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আগের বছরের তুলনায় সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের পরিমাণ প্রায় ১৯ শতাংশ বেড়েছে।
বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রাজস্ব বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান এসব তথ্য জানান। নজিবুর রহমান বলেন, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের সংশোধিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। ২৪ জুলাই পর্যন্ত প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগৃহীত হয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে চূড়ান্ত হিসাব পাওয়া গেলে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
খাতভিত্তিক রাজস্ব আয়ের হিসাব হলো, গত অর্থবছরে আমদানি ও রফতানি শুল্ক খাত থেকে আয় হয়েছে ৫৪ হাজার ৩৩০ কোটি ৪৮ লাখ, স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) থেকে ৬৬ হাজার ৮৯১ কোটি ৪৫ লাখ এবং আয়কর ও ভ্রমণ কর খাতে ৬৩ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, গত অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে নানামুখী চ্যালেঞ্জ ছিল। এর ফলে রাজস্ব আহরণ প্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি।
এসব চ্যালেঞ্জ না থাকলে রাজস্ব আহরণ আরও বৃদ্ধি পেত। চ্যালেঞ্জসমূহ হলো, ভ্যাট আইন ২০১২ বাস্তবায়নকে সামনে রেখে করদাতা ও ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেয়ার উদ্দেশ্যে ভ্যাটের চলতি হিসাবের টাকার জের ‘শুন্য’ করে আনা হয়। ফলে মাসের শেষ ৬ থেকে ৭ দিন সাধারণভাবে যে হারে পণ্য খালাস ও রাজস্ব জমা হয়, সেভাবে হয়নি। ভ্যাটের মূল রাজস্ব আসে সিগারেট খাত ও মোবাইল অপারেটরদের কাছ থেকে। জুন মাসে অপ্রত্যাশিতভাবে এ খাতে রাজস্ব আহরণ হ্রাস পায়। জুন মাসের শেষ সপ্তাহে রমজান ও ঈদের দীর্ঘ ছুটির কারণে আমদানি পর্যায়ে পণ্য খালাস হ্রাস পেয়েছে এবং সে কারণে রাজস্ব আহরণ হ্রাস পেয়েছে।
একইভাবে দীর্ঘ ছুটির নেতিবাচক প্রভাব স্থানীয় ভ্যাট ও আয়কর আহরণের ক্ষেত্রেও পড়েছে। এছাড়া রাজস্ব আহরণের অন্যতম খাত হলো ‘উৎসে ভ্যাট ও আয়কর’। অর্থবছরের শেষ সময়ে ঈদের দীর্ঘ ছুটির কারণে সরকারি-বেসরকারি অফিসে কাজকর্ম কমে যায় এবং রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ে। ব্যাংকিং খাতে ১৪ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির জন্য আয়কর খাতে রাজস্ব আহরণ হ্রাস পেয়েছে। নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নকে সামনে রেখে ভ্যাট ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের কর্মঘন্টার একটা বড় অংশ এ আইন নিয়ে কাউন্সেলিং ও সভা সেমিনারে ব্যয় হয়েছে। ফলে অন্যান্য অর্থবছরের মতো কর্মকর্তারা রাজস্ব আহরণে স্বাভাবিক মনোযোগ দিতে পারেননি। আমদানি পর্যায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রকল্পসমূহকে আমদানি শুল্ক হতে অব্যাহতি প্রদান করে। এর মধ্যে জ্বালানি খাতকে উৎসাহিত করার জন্য প্রদত্ত অব্যাহতি উল্লেখযোগ্য।
নজিবুর রহমান বলেন, পেট্রোবাংলা ও বিপিসির কাছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বকেয়া রয়ে গেছে। দীর্ঘ দিনের পুঞ্জীভূত এই বকেয়া রাজস্ব পাওয়া গেলে গত অর্থবছরে সরকারের নির্ধারিত মূল লক্ষ্যমাত্রা দুই লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা রাজস্ব অর্জন সম্ভব ছিল। করদাতা ও দেশবাসীর সহায়তায় চলতি অর্থবছরের নির্ধারিত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।