রাজস্ব আদায় বাড়াতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সহায়তা চাইলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) জেলা প্রশাসক সম্মেলনের প্রথম দিনের তৃতীয় অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী জেলা প্রশাসকদের কাছে এ সহায়তা চান। অধিবেশন শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
অর্থ বিভাগ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগ এবং বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সঙ্গে জেলা প্রশাসকদের এ কার্য অধিবেশন হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এতে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠকের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের তরফ থেকে আমরা তাদের যেটা বললাম- আমার মোস্ট ইম্পটেন্ট জিনিস হলো রাজস্ব আদায় করা। আদায় করলেই সেবা দেওয়া যায়। আদায়টা যদি না বাড়ে সেবা বাড়ে না কোনদিন।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখন দেশে দর্শনীয়ভাবে সেবা দেওয়া হয়। সুতরাং আপনাদের বেশ জোর হয়েছে, আপনারা রাজস্ব আদায়ে সহায়তা করবেন। এবং লোকজনকে বলবেন এটা দিলে আপনারা ফলটা তো দেখছেন পাওয়া যায়, সুতরাং দেন। এটাই তাদের কাছে আমার বলার ছিল। আর বিশেষ কিছু বলার ছিল না।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকরা কিছু বলেছেন কিনা- জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘না, জেলা প্রশাসকদের নানান রকমের প্রশ্ন ছিল, সেই প্রশ্নগুলো আমার সচিবরা টেক কেয়ার অফ, বিকজ দেয়ার ওয়ার স্মল ইস্যুজ।’
‘বড় ইস্যু একটা আছে। এটা কয়েকবারই হয়েছে, এবারও আলোচিত হলো। ট্রেজারি বিল্ডিংগুলো পুরনো ও ছোট। এগুলোকে বড় করার একটা প্ল্যান। আমি পূর্ত মন্ত্রণালয়কে বলেছি আপনারা সব ট্রেজারিকে দোতলা করার চেষ্টা করেন। প্রত্যেকখাতেই ট্রেজারি একতলা আছে এবং পুরনো বিল্ডিং, এগুলোকে দোতলা করার একটা প্রোগ্রাম নেন। পূর্ত বিভাগ বলেছে তারা এটা নিয়ে কাজ করছে।’
রাজস্ব আদায় নিয়ে ডিসিরা কোনো সীমাবদ্ধতার কথা বলেছেন কিনা- এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘না, না। সীমাবদ্ধতার কথা বিশেষ কিছু বলেনি।’
আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘গতবার আমি ডিস্ট্রিক বাজেট দিয়েছিলাম। আপনারা এখন যেটা করবেন, আপনারা প্রত্যেক ডিস্ট্রিকের অফিসারদের বছরের প্রথম মিটিং যেটা করবেন তাদের বলুন তোমরা এটার আলোকে এই ডিস্ট্রিক বাজেট আমাদের দাও। সেই বাজেটটি যদি তাদের হাতে থাকে তবে বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ করা অনেক সহজ হয়।’
এর আগে ডিসি সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দ্বিতীয় কার্য-অধিবেশন হয়।
অধিবেশন শেষে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু সাংবাদিকদের বলে, ‘আমরা বলেছি ২০১২ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে হ্যাজার্ডাস চাইল্ড লেবার (ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শ্রম) এলিমিনেশন (কমানো) করব। এজন্য একটি সার্ভে করে, সার্ভে আমরা আরম্ভ করেছি। এরপর প্রোগ্রাম নিয়ে তাদের আত্মকর্মসংস্থান বা তাদের পিতামাতার আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে যাতে চাইল্ড লেবার বিশেষ করে হ্যাজার্ডাস চাইল্ড লেবার এলিমেনিনেশন করা যায়, সেই পরিকল্পনাটা আমরা ডিসিদের সামনে উপস্থাপন করেছি।’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘আমরা বন্যা, খরাসহ বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা ইনশাআল্লাহ আমরা করব, সেই কথা উল্লেখ করেছি।’
ডিসিরা কোনো সীমাবদ্ধতা বা সমস্যার কথা বলেছেন কিনা- এ বিষয়ে মায়া বলেন, ‘এই ধরণের কোন কথা বলেননি, এই ধরণের কোন কথা উঠেওনি। শুধু বন্যার প্রস্তুতি ভাল হওয়া ও সুচারুভাবে বন্যা মোকাবেলা করার জন্য তাদের (ডিসিদের) ধন্যবাদ দেওয়া হয়েছে।’
এই অধিবেশনে অংশ নেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুও।
বৈঠক শেষে দ্বিতীয় অধিবেশনের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানিয়েছে, ডিসিদের প্রস্তাব অনুযায়ী উৎপাদন ব্যয় কমাতে মৎস্য খামার, হ্যাচারি, নার্সারি ও প্রক্রিয়াজাত শিল্পের বিদ্যুৎ বিলের শ্রেণিভিত্তিক বিন্যাস করার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিবেচনা করা হবে।
এ ছাড়া এতে বলা হয়, বিদ্যুৎ বিভাগের সব সঞ্চালন লাইন আধুনিকায়ন করা হবে। একই সঙ্গে বিদ্যুতের গ্রিড লাইন বা টাওয়ায়র স্থাপনে সংশ্লিষ্ট জমির মালিককে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলেও অধিবেশনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সব কার্য-অধিবেশনেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সিনিয়র সচিব, সচিব ও ভারপ্রাপ্ত সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।