রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিয়ানের সুচরণ এলাকায় পাঁচদিন ধরে একটি পরিবারকে একঘরে করে রেখেছে সমাজপতিরা।
স্থানীয় মাতব্বরদের নিদের্শে ওই পরিবারের সঙ্গে সবধরনের সামাজিক ও সম্পর্ক ছিন্ন করছেন গ্রামের লোকজন। এমনকি একঘরে করে রাখা ওই পরিবারের অসুস্থ শিশুটির জন্য ওষুধও ওই গ্রামে কিনতে দেয়া হচ্ছে না।
যাতায়াতের জন্য রিকশা বা ভ্যানেও নেয়া হচ্ছে না। বাধা দেয়া হচ্ছে স্কুলে যেতেও। প্রাইভেট পড়তে যেতে দেয়া হচ্ছে না। গ্রামের মাতব্বররা জানিয়েছেন, তাদের নিদের্শনা অমান্য করায় ওই পরিবারকে একঘরে করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী পরিবারের বেবী বেগম জানান, ২০১৪ সালের ২৮ মার্চ তার মেয়ে আয়েশা আকতারের সঙ্গে একই গ্রামের তরিকুল ইসলাম সাজুর বিয়ে হয়।
বিয়ের তিন মাস পর থেকে চার লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে সাজু। কিন্তু টাকা দিতে না পারায় নানাভাবে নির্যাতন শুরু হয় আয়েশার ওপর।
বিয়ের এক বছর পর সন্তানসম্ভবা হন আয়েশা। কিন্তু আল্ট্রাসনোগ্রামে মেয়ে সন্তান আসছে জানতে পেরে আয়েশার ওপর অত্যাচার বেড়ে যায়।
২০১৬ সালে মেয়ের বয়স যখন এক বছর তখন আয়েশাকে তালাক দেন সাজু। দেন মোহরের এক লাখ টাকা পরিশোধও করেন।
কিন্তু মেয়ের খরচের জন্য প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ওই টাকা ঠিক মতো দেয়া হচ্ছিল। এরই মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশু সুমাইয়া।
কিন্তু ওই এক হাজার টাকায় শিশুর চিকিৎসা খরচ চলে না। তাই টাকা বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হয় সাজুকে। বাবা হয়েও মেয়ের চিকিৎসার খরচ দিতে অস্বীকার করেন তিনি।
পরে বাধ্য হয়ে এ বিষয়ে গ্রাম্যসমাজে আলোচনার জন্য উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। কিন্তু গ্রামের মাতব্বরা সাজুর পক্ষে অবস্থান নেয়ার অভিযোগ এনে সমঝোতা বৈঠক প্রত্যাখ্যান করেন তারা।
পরবর্তীতে কয়েক দফা শালিসে বসার জন্য ডাকা হলেও আয়েশার পরিবার তাতে সাড়া দেয়নি। এ কারণে গ্রামের মাতব্বররা প্রায় এক সপ্তাহ আগে পরিবারটিকে একঘরে করে দেয়।
যে বৈঠকে তাদের একঘরে করা হয় সেখানে সমাজপতিদের মধ্যে ছিলেন আজিজুল, কামাল, আয়নাল মেহের, শুকচান এবং নুরেশ।
এ বিষয়ে আয়েশা আকতার বলেন, একঘরে করার পর থেকে তিনি তার মেয়ের ওষুধ কিনতে পারছেন না। এ সময় একদিন মেয়ের জন্য স্যালাইন কিনতে গেলেও বাধা দেয়া হয়। পরে বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে কাটাখালি বাজার থেকে ওষুধ আনা হয়। তার ছোটবোন শাহানাজকে প্রাইভেট পড়তে যেতে বাধা দেয়া হচ্ছে।
সেই সঙ্গে মক্তব ও মাদরাসায় যেতেও দেয়া হচ্ছে না। তাদের প্রতিনিয়ত হুমকি ধমকি দেয়া হচ্ছে। তার বাবা শহিদুল ইসলাম রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে পরিচ্ছন্নতা বিভাগের একজন মাস্টার রোল কর্মচারী। তারা চার বোন সবাই লেখাপড়া করেন। তাদের সবাইকে স্কুল কলেজে যেতে বাধা দেয়া হচ্ছে।
সুচরণ গ্রামের মাতব্বর আজিজুল জানান, পরিবারটি সমাজের কথা না শোনায় তাদের একঘরে করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত গ্রামের সবাই মিলে নেয়া হয়েছে। পরিবারটি যদি এসে ক্ষমা চায় তাহলে একঘরে রাখার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয়া হবে।
এ বিষয়ে হরিয়ান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মফিদুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, একঘরে করে গ্রামের সমাজপতিরা চরম অন্যায় করেছেন। এটা সরাসরি রাষ্ট্রের আইনেরও বিরোধী। তবে শিগগিরই এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।