বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির মামলায় বরগুনা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা তারিক সালমনকে কারাগারে পাঠানোর রেশে এবার ব্যবস্থা নেয়া হলো দুই জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে। বরিশালের জেলা প্রশাসক গাজী মো. সাইফুজ্জামান এবং বরগুনার জেলা প্রশাসক মহা. বশিরুল আলমকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।
ইউএনও তারিক সালমনকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে সোমবার এই আদেশ জারির প্রস্তুতি চলছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। আর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম। তিনি জানান, ইউএনও তারিক সালমনকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় দুই জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘দুই জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহারে ফাইলে সই করা হয়েছে। ফাইল চলে গেছে। প্রজ্ঞাপন করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।’
তবে সংশ্লিষ্ট শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে ঠিকই কিন্তু। প্রজ্ঞাপন জারি হতে সময় লাগতে পারে। কারণ কালকে ডিসি সম্মেলন শুরু। এর মধ্যে হয়তো প্রজ্ঞাপন নাও হতে পারে। ডিসি সম্মেলন শেষ হলে প্রজ্ঞাপন হতে পারে।’
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইউএনও তারেক সালমানের ঘটনায় অনেকেই প্রত্যাহার হবে। অনেকের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ তবে তিনি সুনির্দিষ্ট করে কোনো কর্মকর্তার নাম বলেননি।
বরগুনা সদর উপজেলায় বদলি হওয়ার আগে তারিক সালমন ছিলেন বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায়। সেখানে গত স্বাধীনতা দিবসে উপজেলা প্রশাসনের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে বঙ্গবন্ধুর যে ছবি ব্যবহার করা হয়েছিল তাতে জাতির জনককে বিকৃতির অভিযোগে মামলা করেছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সে সময়ের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এবং বরিশাল আইনজীবী সমিতির সভাপতি সৈয়দ ওবায়েদ উল্লাহ সাজু।
এই মামলায় গত ১৯ জুলাই বরিশাল মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক আলী হোসাইনের আদালতে হাজিরা দেন তারিক সালমন। বিচারক তার জামিন আবেদন প্রথমে নাচক করলেও পরে আদেশ পাল্টে জামিন দেন।
এই ঘটনা প্রকাশ পেলে প্রশাসনে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। সেই সঙ্গে সমলোচনার ঝড় উঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তারিক সালমন বঙ্গবন্ধুর যে ছবিটি ব্যবহার করেছিলেন, সেটি এঁকেছিল শিশু অদ্রিজা কর। গত ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে আগৈলঝাড়ায় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করার পর তাকে পুরস্কৃতও করেছিলেন স্থানীয় উপজেলার চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোর্তজা খান।
এই ঘটনায় মামলার পর তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর মামলাকারী আওয়ামী লীগ নেতা সাজুকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কারও করা হয়। রবিবার সকালে প্রথম কার্যদিবসে মামলাটি তুলেও নেন তিনি।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন রবিবার রাজশাহীতে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ইউএনও সালমনকে ফাঁসানোর ঘটনাটি পরিকল্পিত এবং সরকার এর শেষ দেখে ছাড়বে।
ইউএনও সালমন গণমাধ্যমকে জানান, আগৈলঝাড়ায় দায়িত্ব পালনের সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে তার বিরোধ হয়েছিল এবং এর জেরেই তার বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়েছিল।
এই মামলা করার আগে ইউএনওকে বরিশালের জেলা প্রশাসক গাজী মো. সাইফুজ্জামান কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর তারিক সালমন গত ১৯ জুলাই বরিশাল আদালতে হাজিরা দেয়ার সময় তার পক্ষে আইনজীবী পাচ্ছিলেন না। এ সময় ইউএনও সালমন জেলা প্রশাসকের কাছে সহায়তা চাইলে তিনি তা অগ্রাহ্য করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।