এবারের বিপিএলে প্রতি ম্যাচে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণ কি আনুপাতিক হারে কমে যাচ্ছে? ক্রিকেটপাড়ায় এ প্রশ্ন উকি-ঝুঁকি দিচ্ছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের জন্য খবরটি মোটেই সুখবর নয়।
তবে বিপিএল আয়োজক ও প্রতিযোগী দলগুলোর মালিকদের কেউ কেউ এটাকে সুসংবাদ বলেই মনে করছেন। খুব সম্ভাবত এবার বিপিএলে প্রতি ম্যাচে বিদেশি ক্রিকেটার খেলার কোটা বাড়ানো হচ্ছে। তার মানে প্রতি ম্যাচে চারজনের বদলে এবার পাঁচজন করে বিদেশি ক্রিকেটার খেলনোর চিন্তা-ভাবনা চলছে।
চিন্তা-ভাবনা হয়তো কম বলা হলো। বলা যায় খেলতে যাচ্ছেন। ভেতরের খবর, বিপিএল আয়োজক কমিটি, বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল এবং কয়েকটি দলের মালিকপক্ষও নাকি তেমনটাই ভাবছেন। সত্যিই কি তা-ই?
এখন পর্যন্ত ঘোষণা না আসলেও হাবভাবে মনে হচ্ছে সেটাই। সাতজনের বদলে প্রতি খেলায় এবার ছয়জন দেশি ক্রিকেটার খেলানোর চিন্তা-ভাবনা চলছে। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক ও টেকনিক্যাল কমিটির অন্যতম শীর্ষ কর্তা জালাল ইউনুসের কণ্ঠেও আকার-ইঙ্গিতে তেমন পূর্বাভাস।
আইপিএল-বিগ ব্যাশসহ টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের সব বড় বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি আসরেই চারজন করে বিদেশি খেলোয়াড় খেলাচ্ছে। বাংলাদেশের বিপিএলেও এতকাল তাই ছিল। সাতজন স্থানীয় ক্রিকেটারের সাথে চার ভিনদেশির সন্মিলনে সাজানো হতো একাদশ।
এবার হঠাৎ কি হলো যে সে সংখ্যায় রদবদল? কোথায় দেশি ক্রিকেটার বেশি করে একজন বিদেশি কমিয়ে দেয়া হবে? তা না- উল্টো বিদেশি বাড়িয়ে দেয়ার চিন্তা-ভাবনা! এতে করে প্রতি দলের একজন করে স্থানীয় ক্রিকেটার খেলার সুযোগ হারাবেন। সেটা মোটেই দেশের ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের জন্য ভালো খবর নয়।
এতে করে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাদের খেলার সুযোগ যাবে কমে। তাতে দেশের ক্রিকেটের লাভের বদলে ক্ষতিই হবে। তা কি আয়োজক ও ব্যবস্থাপকদের মাথায় নেই?
এমন প্রশ্নের জবাবে বিপিএল আয়োজক ও ব্যবস্থাপকদের ব্যাখ্যা, দেশের ক্রিকেটারদের গুণগত মান বাড়ানো এবং তাদের আর্থিক দিক থেকে লাভবানের কথা-চিন্তা করে বিপিএল আয়োজন। বিপিএল খেলে প্রতি বছর কিছু বাড়তি অর্থ লাভ হচ্ছে।
এর পাশাপাশি ক্রিস গেইল, সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়বর্ধনে, আফ্রিদি, ডোয়াইন ব্রাভো ও আন্দ্রে রাসেল আর মোহাম্মদ আমিরের মতো বিশ্বমানের পারফরমারদের সাথে এক হোটেলে থাকা, এক সাথে প্র্যাকটিস করা, ড্রেসিংরুম শেয়ার এবং ম্যাচ খেলার অবারিত সুযোগ- বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মান উন্নয়নে অনেক কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
তাতে সাহস, উদ্যম, অনুপ্রেরণা এবং নিঃসংকোচে নিজের সামর্থ্যের প্রয়োগ ঘটানোর সুযোগ মিলছে। বিপিএল খেলে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদেরদের পারফরম্যান্সের গ্রাফ ওপরেই উঠেছে। যার প্রমাণও আছে। কিন্তু বিপিএল আয়োজক কমিটি ও কিছু কিছু ফ্র্যাঞ্চাইজির ধারণা, বাংলাদেশে কোয়ালিটি ক্রিকেটারের সংখ্যা তুলনামূলক কম।
এবার আবার দল বেড়ে আটে এসেছে। এখন প্রতি ম্যাচে চারজন করে বিদেশির সাথে সাতজন করে দেশি খেলানোর অর্থ আট গুণিতক সাত-মানে ৫৬ জন ক্রিকেটার দরকার। এতকাল যা ৪২ কিংবা ৪৯ জন হলেই চলতো। কিন্তু এবার তা বেড়ে ৫৬ তে গিয়ে ঠেকবে।
কিন্তু বাংলাদেশে অত উঁচুমানের ক্রিকেটার কই? যারা মেধা, মনন ও প্রজ্ঞায় আন্তজার্তিক ও বিশ্বমানের ক্রিকেটারদের সাথে সামঞ্জস্য ও ভারসাম্য রেখে পারফরম করতে পারবেন? তাই দেশি ক্রিকেটার খেলানোর কোটা একজন কমিয়ে একজন করে বিদেশি ক্রিকেটার বাড়ানোর চিন্তা-ভাবনা চলছে।
আয়োজক ও ফ্র্যাঞ্চাইজিদের মত, এতে করে দলগুলোর শক্তির ভারসাম্য ঠিক থাকবে। দর্শকরা আকর্ষণীয় ও উপভোগ্য ক্রিকেট দেখতে পাবেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতাও যাবে বেড়ে। জানা গেছে- সব দল নয়, তবে কয়েকটি দল তথা ফ্র্যাঞ্চাইজি দেশি ক্রিকেটার কমিয়ে পাঁচজন করে বিদেশি খেলানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
ধারনা করা হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত বিপিএল গভনিং কাউন্সিল ও ফ্র্যাঞ্চাইজিদের যৌথ সভায় হয়তো সে সিদ্ধান্তই গৃহীত হবে। তার মানে ধরেই নেয়া যায়, ২০১৭ সালের বিপিএলে প্রতি ম্যাচে সর্বাধিক পাঁচজন করে বিদেশি ও ছয়জন বাংলাদেশি ক্রিকেটার খেলার সুযোগ পাবেন।