প্রযুক্তিনির্ভর বর্তমান পৃথিবীতে ফেসবুক এখন সবচেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এর মাধ্যমে বর্তমানে হেন কিছু নেই, যা সম্পর্কে জানতে পারছে না মানুষ। দিন দিন বাড়ছেই এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা।
সাধারণত ফেসবুক ব্যবহারকারী যেকেউ মনে করেন, অন্যরাও তার মতোই, একই রকম। কিন্তু বিশাল এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গ্রাহকের কাছে একক কিছুর চেয়েও বেশি; এটাকে কেউ কাছের-দূরের বন্ধুদের খবরাখবর রাখতে, কেউ সৃষ্টিশীল কাজের প্রচারণার ক্ষেত্র হিসেবে দেখেন। অনেকে আবার একে বিশাল প্রচারমাধ্যম মনে করেন, যেখানে টেলিভিশনের মতো সবারই গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা যায়।
সম্প্রতি এক আন্তর্জাতিক গবেষণা নিশ্চিত করেছে যে, ফেসবুক অনেকটাই রাসোম্যান ইফেক্টের মতো (যেখানে একই রকম ঘটনায় ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র থাকে ও ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়)।
‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ভার্চুয়াল কমিউনিটিস অ্যান্ড সোস্যাল নেটওয়ার্কিং’ শিরোনামে এই গবেষণায় গবেষকরা চার ধরনের ফেসবুক ব্যবহারকারী চিহ্নিত করেছেন। এরা হলেন, সম্পর্ক নির্মাণকারী, উইডো শপারস (পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে বাড়তে থাকা শ্রেণিবিশেষ), টাউন ক্রায়ার্স (শহুরে জনগোষ্ঠীকে কোনো বিষয় বা ঘটনা সম্পর্কে ঘোষণাকারী) এবং সেলফিস।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিংহাম ইয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব কমিউনিকেশনের গবেষণা কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা ওই চার ধরনের ব্যবহারকারীর কাছে ৪৮টি বিবৃতির বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। এ গবেষণার জন্য শ্রেণিভাগ, পরিসংখ্যান, ক্ষুদ্র নমুনা নিয়ে কাজ করা হয়।
গবেষণা তথ্য থেকে দেখা গেছে চার শ্রেণির ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে পৃথক বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। এক নজরে দেখা যাক চার রকমের ফেসবুক ব্যবহারকারীদের।
১. সম্পর্ক নির্মাণকারী
এরা ফেসবুক ব্যবহার করে থাকে মূলত বন্ধু, স্বজন ও পরিচিতদের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও গাঢ় করতে। ব্রিংহাম ইয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব কমিউনিকেশনের অধ্যাপক টম রবিনসন মনে করেন, ফেসবুক তাদের প্রযুক্তিহীন যাপিত জীবনের একটি সম্প্রসারণ মাত্র। এ ধরনের ব্যবহারকারীরা ফেসবুককে পরিবারের প্রতি তার ভালবাসা ও তার প্রতি পরিবারের ভালবাসাকে প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে জানেন। তারা ফেসবুককে ব্যক্তিগত ঘটনাবলীর মিনি হাব হিসেবে ভাবেন, ভার্চুয়াল উন্মুক্ত সমাজ হিসেবে মানতে নারাজ।
২. উইডো শপারস
এই শ্রেণির ব্যবহারকারীরা সামাজিক বাধ্যবাধ্যকতার ধারণা দ্বারা পরিচালিত হয়। এরা ফেসবুককে আধুনিক জীবনে অপরিহার্য ভাবলেও ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি বা নিজেকে নিয়ে কালেভদ্রে কিছু লেখা দেয়। এদের সম্পর্কে এ গবেষণার অন্যতম ব্রিংহাম ইয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কালাহান বলেছেন, সামাজিক মিডিয়ার সমকক্ষ ব্যক্তিদের পর্যবেক্ষক।
এ গ্রুপের নারী বা পুরুষদের মনোভাব এমন- ‘ফেসবুকে আমি সহজেই অন্যদের দেখতে পারি, যাদের ভাল লাগে, তাদের সম্পর্কে জানতে পারি’, ‘আমি ফেসবুকে থাকি অন্যদের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে।’
৩. টাউন ক্রায়ার্স
এ শ্রেণির লোকজন প্রচারণানির্ভর। সাধারণত এরা পোশাকি, সাংবাদিক, সক্রিয় কর্মী বা অনুষ্ঠান সংগঠন এরকম কেউ হয়, যারা ফেসবুককে প্রচারযন্ত্র মনে করেন। তবে ফেসবুকে এদের যেমন জীবন, বাস্তবে তা নয়।
এরা ঘটনাবলী, তথ্য মানুষকে জানাতে চায়। যেকোনো বিষয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কাছে-দূরের মানুষদের জানাতে চায়। তবে কেউ তা পছন্দ কি অপছন্দ করছে তা খুব একটা গ্রাহ্য করে না।
যেকোনো বিষয় ফেসবুকে তুলে ধরলেও কোনো ঘটনা নিয়ে সরাসরি কথা বলতে তারা ফোন বা সরাসরি বার্তায় স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন।
৪. সেলফিস
এ গ্রুপের ব্যবহারকারীরা একত্রে সবার পরিচিত এমন মনোভাব দেখান। তারা বারবার সেলফি দিতে থাকেন। নিজের ফেসবুকে প্রায়ই ছবি, তথ্য ও ভিডিও শেয়ার ও স্ট্যাটাস আপডেট করেন। শুরুর দিকে নিজের দিতে দৃষ্টি কাড়তেই এরা এটা করেন বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। এরা অন্যদের কাছে কোনো বিষয়ে অনুমোদন পাওয়ার চেয়েও নোটিফিকেশন অ্যালার্ম বেশি পছন্দ করেন।
এক্ষেত্রে তাদের ভাষ্য হলো, ছবি তুলে তা ফোনে রাখার অর্থ হয় না। বরং তোলা ছবি ফেসবুকে দিয়ে মনে হয়, কিছু একটা করা হলো। তবে অনলাইনে নিজেকে উপস্থাপনের বিষয়ে এরা তেমন সতর্ক থাকেন না বলে গবেষণায় বলা হয়েছে।