সিদ্দিকুর রহমান ॥
চারপাশে খাল-নদীতে ঘেরা এই নগরীসহ আশে-পাশের গ্রাম। তাই পেশাদার মৎস্যজীবী ছাড়াও এখানের সিংহভাগ বাসিন্দারা কম-বেশি মাছ শিকার করে। সারা বছর নদী-নালা-ডোবা-পুকুর থেকে মাছ শিকার করে বাসিন্দারা। তবে বর্ষা মৌসুম এলে মাছ শিকারের ধুম পড়ে। আশে-পাশের গ্রামের প্রত্যেক বাড়ি বা ঘরে মাছ শিকারের জন্য জাল ছিল। জাল বুনন’র শিল্পি ছিল প্রত্যেক বাড়িতেই। কালের বিবর্তনে সময় ব্যয় করে জাল বুনন করা এখন আর হয় না। আগের মতো সৌখিন শিকারীও নেই। তবুও পানি বাড়লে সৌখিন শিকারীদের মনে সুপ্ত ইচ্ছা জানান দেয়। তখনই প্রয়োজন পড়ে জাল’র। আগের মতো জাল বুনন শিল্পি নেই। তাই এখন আর জাল নেই প্রত্যেক বাড়ি বা ঘরে। এতে সৌখিন শিকারীদের সুপ্ত ইচ্ছা পূরন হয় না। গ্রামীণজীবনে মিশে থাকা ঝাকি , চাক ও কোনা জাল দিয়ে মাছ শিকার স্মৃতিতে রোমন্থন করার মতো হয়ে গেছে। সৌখিন শিকারীদের তাগিদে কিছু শিল্পিরা জাল বুনন করে। চাহিদা বেশি থাকায় বানিজ্যিকভাবে জাল বুনে বিক্রিও করে। বর্তমানে গ্রামের প্রায় প্রতিটি পুকুর-ডোবা-খাল-বিল টইটম্বুর । যার কারনে সৌখিন শিকারীদের সুপ্ত ইচ্ছা পূরনের সুযোগ করে দিতে নগরীর জাদুঘর ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সংলগ্ন ফুটপাতের উপর জাল’র পসরা সাজিয়ে বসেছে ব্যবসায়ীরা। সেই জাল কিনতে গ্রামের সাধারন মানুষদের সাথে সাথে সৌখিন শিকারীদের উপস্থিতি বেশ চোখে পড়ার মত। দেখা গেছে , নানা সাইজের ঝাকি ও কোনা এবং চাক জাল কিনতে ব্যবসায়ীদের সাথে দরদাম করছে তারা। ব্যবসায়ীরা জানায়, দিনে গড়ে ৩ থেকে ৪ টা জাল বিক্রি হয়ে থাকে।
আবার কোন কোন সময়ে সপ্তাহে ১ টাও বিক্রি হয়না। জাল ব্যবসায়ী সুলতান আহমেদের (৬০) সাথে আলাপ কালে তিনি জানান, দীর্ঘ ৪৬ বছর ধরে সারা ঝাকি,চাক ও কোনা জাল বিক্রয় করেন। বর্তমানে কারেন্ট জাল এর ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে এই জালের চাহিদা দিন দিন কমে যাচ্ছে। কিন্তু তারপরেও পূর্বপুরুষের পেশা ও জীবিকা নির্বাহের জন্য এখনো এই জাল বিক্রয় করেন। তিনি বলেন, আশে পাশের উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আমার এই জাল কিনতে অনেক লোক আসে । তারা তাদের পছন্দ অনুযায়ী জাল ক্রয় করে থাকে । আবার কেউ কেউ তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী জালের অর্ডারও দিয়ে যায়। এছাড়াও সাইজ অনুযায়ী জালের বিক্রয়মূল্য একেক রকমের। দেখা যাচ্ছে ঝাকি জাল বড় সাইজের সর্বনি¤œ ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এছাড়াও মাঝাড়ি সাইজে ঝাকি জাল ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এদিকে কোনা জাল ৬৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ২০০ টাকা দ্বরে বিক্রি হয়। প্রতিদিন কি পরিমান বিক্রি হয় এই প্রশ্নে তিনি জানান, বর্ষার সময়ে চাহিদা বেশি থাকায় আমাদের বেচাবিক্রি ভাল হয়ে থাকে। দেখা যায় প্রতিদিন গড়ে ৩-৪ টা এবং তার বেশিও ছোট বড় ঝাকি জাল বিক্রি হয়। কিন্তু এই মৌসুম শেষ হলে অলস হয়ে পড়ে থাকতে হয় । তখন প্রতিদিন ২টা সর্বোচ্চ হলে ৩ টা বিক্রি হয় । তাও আবার সীমিত লাভে , কারন এমনিতেই ডাল মৌসুম,তার উপর এই আয়ের উপর দিয়ে সংসার চালাতে হয় । তিনি এসময় আরও বলেন , এমনও সময় গেছে সপ্তাহে ১ টাও বিক্রি করতে পারি নাই । তাই নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল বন্ধ করে এই জালের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের নিকট আহবান জানান তিনি। এদিকে ঐ স্থান টি ঘুরে এটাও দেখা গেছেযে শুধু সুলতান আহমেদ নয় মুনসুর আলী (৮৫),রহিম নামের আরও অনেক ব্যবসায়ী রয়েছে। যারা কিনা এই জাল বিক্রির মধ্যে দিয়ে তাদের পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।