মধ্যপ্রাচ্য সংকটের জেরে কাতারের ওপর সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের আরোপিত অবরোধে কয়েক বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ আদায়ে আইনি লড়াই শুরুর ঘোষণা দিয়েছে কাতার। ক্ষতিপূরণ মামলা দায়েরের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছেন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল।
রোববার রাজধানী দোহায় কাতারের অ্যাটর্নি জেনারেল আলি বিন ফিতাইস আল-মারি সাংবাদিকদের বলেন, কাতার এয়ারওয়েজসহ অন্যান্য প্রধান প্রাইভেট কোম্পানি, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের দাবিকৃত ক্ষতির বিষয়ে কাজ করবে ক্ষতিপূরণ দাবি কমিটি।
তিনি বলেন, ক্ষতিপূরণ চাওয়ার ক্ষেত্রে ওই কমিটি দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া অনুস্মরণ করবে। একই সঙ্গে দাবি আদায়ে আন্তর্জাতিক আইনি প্রতিষ্ঠানকেও নিয়োগ করবে কাতার।
অাল মারি বলেন, এই অবরোধের কারণে জনগণ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, ব্যাংকও ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। এবং যারা এ জন্য দায়ী তাদেরকে অবশ্যই ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করতে হবে।
কাতারের নবগঠিত এই কমিটির সদস্যদের মধ্যে দেশটির বিচারমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী রয়েছেন।
উল্লেখ্য, সন্ত্রাসবাদে সমর্থন ও অর্থায়নের অভিযোগ এনে গত ৫ জুন সৌদি আরব ও এর মিত্র দেশগুলো উপসাগরীয় প্রতিবেশী কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেয়। এর জেরে গত দশকের মধ্যে নজিরবিহীন কূটনৈতিক সংকট শুরু হয় পুরো মধ্যপ্রাচ্যে। সৌদি আরবের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান ঘনিষ্ঠতার অভিযোগও আনা হয় কাতারের বিরুদ্ধে। তবে কাতার সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট তাদের দেশ ত্যাগে কাতারের নাগরিকদের ১৪ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেয়। এছাড়া কাতারের বিভিন্ন সংস্থা ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়। গত ২২ জুন অবরোধ প্রত্যাহারে কাতারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা বন্ধসহ ১৩ দফা ঘোষণা দেয় সৌদি জোট। দোহা সৌদি জোটের বেঁধে দেয়া ১৩ শর্তকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের নজিরবিহীন সংকটে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। কুয়েতসহ বেশ কয়েকটি দেশ মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক সংকট সমাধানে সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েল বলেছেন, আরব প্রতিবেশিরা কাতারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সমর্থনের যে অভিযোগ এনেছে তা থেকে দোহাকে রেহাই দিতে তার দেশের গোয়েন্দারা প্রচেষ্টা চালাবে।
এদিকে, কাতারের এ সংকট নিরসনে সৌদি নেতৃত্বাধীন দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে শুক্রবার রিয়াদে পৌঁঁছেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বোরিস জনসন। উপসাগরীয় অঞ্চলের উত্তেজনা কমিয়ে আনতে শনিবার কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং কাতারের আমিরের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন তিনি।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলছে, কুয়েতের মধ্যস্থতার প্রচেষ্টায় উপসাগরীয় সব পক্ষকে সমর্থনের আহ্বান জানিয়েছেন বোরিস জনসন; যা যুক্তরাজ্য দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।
সূত্র : আল-জাজিরা, ফ্রান্স২৪।