যুক্তরাষ্ট্রে গেল ১৫ বছরে দুই লাখেরও বেশি শিশুর বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত নতুন পরিসংখ্যানে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বাল্যবিয়ে হওয়া ওইসব শিশুর মধ্যে ১০ বছর বয়সী তিনটি মেয়েশিশু এবং ১১ বছর বয়সী একটি ছেলেশিশু রয়েছে। প্রচলিত আইনের মধ্যে কিছু বাধ্যবাধকতা অনুসরণপূর্বক অপ্রাপ্তবয়স্ব এসব শিশুর বিয়ের বিষয়টি অনুমোদন দেয় দেশটি।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিয়ের জন্য সর্বনিম্ন বয়স ১৮ নির্ধারিত হলেও প্রতিটি রাজ্যে এ বিষয়ে কিছু ছাড় রয়েছে। যেমন- বাবা-মায়ের সম্মতি বা গর্ভাবস্থা জনিত কারণে অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ের অনুমতি দেয় দেশটি।
গত মে মাসে নিউ জার্সির হাই-প্রোফাইল রিপাবলিকান গভর্নর বাল্যবিয়ে রোধে আনা একটি আইনে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন। ক্রিস ক্রিস্টির দাবি, ‘আইনটি ধর্মীয় রীতিনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’
দেশটিতে ২০০০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে অন্তত দুই লাখ সাত হাজার ৪৬৮টি বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটে। বাল্যবিয়ে রোধে কাজ করা এমন কিছু সংস্থা এবং এ সংক্রান্ত অনসন্ধানী তথ্যচিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘ফ্রন্টলাইন’র সর্বশেষ পরিসংখ্যানে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
‘বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ’ উল্লেখ করে পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়, দেশটির ১০টি রাজ্য বাল্যবিয়ে সংক্রান্ত কোনো তথ্য অথবা অসম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেছে। ফলে বাল্যবিয়ের সংখ্যা আরও বেশি হবে।
‘আনচেইন্ড’- এর প্রতিষ্ঠাতা ফ্রাইডে রিস বলেন, বাল্যবিয়ে সংক্রান্ত নিউ জার্সি’র তথ্য-উপাত্ত পেয়ে তিনি প্রকৃত অর্থে ‘আলোড়িত’ হয়েছিলেন। কারণ সে চিত্র ছিল ভয়াবহ। ১৯৯৫ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রাজ্যটিতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটে।
‘এটি ছিল আমার চিন্তাতীত’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ওইসব বিয়ের মধ্যে অধিকাংশের বয়স ১৩ বছর এবং প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের সঙ্গে তাদের বিয়ে হয়।
সার্বিক চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মাত্র ১৪ শতাংশ শিশু জীবনসঙ্গী হিসেবে প্রায় সমবয়সী শিশুদের পেয়ে থাকে। অধিকাংশ শিশু ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী ব্যক্তিকে সঙ্গী হিসেবে পেয়ে থাকে।
আলাবামা রাজ্যে দেখা গেছে, ১৪ বছরের এক শিশুর সঙ্গে ৭৪ বছর বয়সী এক বৃদ্ধের বিয়ে দেয়া হয়েছে।
দেশটির বেশিরভাগ রাজ্য যৌনসম্মতির বয়স ১৬ থেকে ১৮ বছর নির্ধারণ করা আছে। প্রচলিত আইনে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুকে সংবিধিবদ্ধ ধর্ষণেরও অভিযোগ আনা যেতে পারে।
তবে বাল্যবিয়ের এসব ঘটনা বিচারক দ্বারা অনুমোদিত হয়ে থাকে। ফলে যৌননির্যাতনের অভিযোগ সেভাবে প্রকাশ্যে আসে না।
তেহরাহ জাস্টিস সেন্টারের আইনজীবী জেনি স্মুথ বলেন, সাধারণত নিম্নবিত্ত শ্রেণির শিশুদের মধ্যে বাল্যবিয়ে বেশি হয়। সংস্থার পক্ষ থেকে তারা নারীদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ এবং বাল্যবিয়ে বন্ধে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, সকল তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শহরের শিশুরা অল্পবয়সে বিয়ে করতে রাজি হয় না। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও ধনী পরিবারের শিশুদের পর্যাপ্ত বয়সে বিয়ে দেয়া হয়। গ্রামীণ জনপদে বাল্যবিয়ের সংখ্যা সর্বাধিক। এর অন্যতম প্রধান কারণ দারিদ্র্যতা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন চিত্র দেখে কিছুটা আশ্বস্ত হতে পারেন আমাদের দেশের কর্তাব্যক্তিরা। সম্প্রতি এক হিসাবে দেখা যায়, বাংলাদেশি মেয়েদের ৪০ শতাংশের বিয়ে হয় ১৫ বছরের আগে, আর ৭৪ শতাংশের ১৮ বছরের আগে। যাদের ১৫ বছরের নিচে বিয়ে হয় তাদের এক-পঞ্চমাংশ ২৪ বছরে পৌঁছার আগেই দুই বা তিন সন্তানের মা হয়।
তবে সুসংবাদ এই যে, বাল্যবিয়ের গতি কিছুটা নিম্নমুখী এবং সেটা সম্ভবত কিশোরীদের মধ্যে দেরিতে বিয়ের কারণে। যা হোক, বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের প্রকট প্রকোপ একটা ধাঁধার জন্ম দেয়। প্রথমত, দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে বেশ সন্তোষজনক হারে। অথচ বাল্যবিয়ে তেমন হারে কমেনি। আর দারিদ্র্য ও বাল্যবিয়ের সংযোগ অত্যন্ত শক্তিশালী।
দ্বিতীয়ত, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে লিঙ্গবৈষম্য দূরীভূত হওয়ার কারণে কিশোরীদের ‘ভয়েস’ বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকে মনে করেন, বাল্যবিয়ে রোধে শিক্ষা একটি শক্তিশালী প্রতিষেধক।
পরিশেষে, নারীদের ক্ষমতায়ন যেখানে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে বাল্যবিয়ের ‘অত্যন্ত প্রকোপ’ নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়।
সূত্র : ইন্ডিপেনডেন্ট